নবকুমার:
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় গাজী গ্রুপের স্টলে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখনে গাজীর পণ্য ক্রেতার সংখ্যা বেশি। তৃতীয় শুক্রবার গতকাল ২০ জানুয়ারি ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আগমনে জমে উঠেছে। এতোদিন দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিলো বেশি। গত ১৯ দিন ধরে তারা ঘুরে ফিরে পণ্য দেখেছেন। খোঁজখবর নিয়েছেন। সবাই পণ্য দেখলেও অধিকাংশ মানুষই পণ্য ক্রয় করেননি। শুক্রবার ছুটির দিন মেলায় মানুষের ঢল নামে। মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে ঘুরেফিরে দেখলেও যাওয়ার সময় পছন্দের পণ্য ক্রয় করে বাসায় নিয়ে গেছেন। তবে দামি পণ্য বিক্রি কম। তাই ওই ব্যবসায়ীরা মেলার আরো কমপক্ষে ৭দিন সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকেই ক্রেতা দর্শনার্থীরা দল বেঁধে মেলায় প্রবেশ করছেন। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, পুরুষ-মহিলা কেউ যেন বাদ যায়নি। সবাই মেলায় এসেছেন। দেদারসে কেনাকাটা করছেন। জুম্মার নামাজের পর স্রোতের মত মানুষ মেলায় প্রবেশ করে। বিকেল পাঁচটার দিকে মেলা প্রাঙ্গনে মানুষের ঢল নামে। তখন মেলা প্রাঙ্গন কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে কেনাবেচার ধুম পড়ে। সাশ্রয়ীমূল্যে দেশীয় নিত্যপণ্যের ছাড় পেয়ে সেদিকে ক্রেতার ঝুঁকছেন। কম দামের পণ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা খুশি। আর বেশি দামের পণ্য ব্যবসায়ীরা প্রচার, প্রসার ও বিপণন ছাড়া আর্থিক ভাবে লাভবান হয়নি।
মেলার প্যাভিলিয়ন, বেঙ্গল, স্কয়ার, মেঘনা গ্রুপ, গাজী গ্রপের স্টলে ক্রেতাদের ভিড়। ফার্ণিচারের প্যাভিলিয়ন আখতার ফার্ণিচার, নাদিয়া ফার্ণিচার, হাতিল ফার্ণিচার, হাতিম ফার্ণিচার, নাভানা ফার্ণিচার, ব্রাদার্স ফার্ণিচারে আরো বেশি ভিড়। তবে আশানুরূপ পণ্য বিক্রি হয়নি। তুরস্ক সহ বিদেশি স্টল-প্যাভিলিয়নেও কেনাকাটার ধুম পড়েছে। মূল্যছাড়, লোভনীয় ডিসকাউন্ট আর আকর্ষণীয় অফারে কেনাবেচার প্রতিযোগিতায় নামে ক্রেতা বিক্রেতারা। সবাই যেন পণ্য কিনতেই মেলায় এসেছেন। কিছু না কিছু ক্রয় করে নাই এমন কোন পরিবার দেখা যায়নি।
মেলায় কাপড়, প্লাস্টিক সামগ্রী, গৃহস্থালি পণ্য, ক্রোকারিজ, ইমিটেশনের গয়না, কসমেটিক্স, খাবার, সৌন্দর্যবর্ধক সামগ্রী, পাট-চামড়া জাত পণ্য, খেলনা, সিরামিক্স, মেলামাইন, ইলেক্ট্রনিক্স ও আসবাবপত্র ও আইসক্রিমের স্টলে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। বিক্রেতারা খুশি। শিশু মেলার রাইডগুলোতে শিশু-কিশোর ও মহিলাদের আনাগোনা বেশি। বাণিজ্য মেলার সময় যতোই শেষ হয়ে আসছে দর্শনার্থী ও ক্রেতার সমাগম ততই বাড়ছে। সেই সঙ্গে তুরস্কের দৃষ্টিনন্দন বাতিঘর, বিদেশি কার্পেট, বাহারি রঙের আলোকসজ্জার সরঞ্জামাদি, গৃহস্থালির পণ্য সহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারাও ডিসকাউন্ট, অফার ও ৫ভাগ থেকে ২৫ ভাগ পর্যন্ত মূল্য ছাড় দিচ্ছেন। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই খুশি।
ফার্নিচার স্টলের ইনচার্জ না প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মেলার শেষের দিকে দর্শনার্থীদের সমাগম বেশি হচ্ছে। পণ্য বিক্রি হচ্ছে কম। দামি পণ্যগুলোর প্রচার ও প্রসার ছাড়া আর্থিক কোন লাভ হয়নি। মেলার প্রথম দিকে কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশা পরবর্তীতে টঙ্গী ইজতেমা আর যানজটে মেলায় আশানুরূপ কেনাবেচা হয়নি। ব্যবসায়ীরা আর্থিক লোকসানে পড়েছেন। তাই মেলার কমপক্ষে আরো সাতদিন সময় বাড়ানো উচিত।
ঢাকার মালিবাগের চৌধুরীপাড়া থেকে মেলায় আসা গৃহবধূ আসমাউল হুসনা বলেন, এবার বাণিজ্য মেলায় তৃতীয় দিনের মতো এসেছি। এতদিন ঘুরাঘুরি, ছবিতোলা আর খাওয়া ছাড়া কোন পণ্য ক্রয় করেনি। আজকে গৃহস্থালি, ইমিটেশনের গয়না, ক্রোকারিজ পণ্য কেনাকাটা করেছি।
ঢাকার বাড্ডা থেকে আসা শারমীন আক্তার বলেন, শিশু মেলার রাইডগুলোতে চড়ে আমার ছেলে মেয়েরা খুব আনন্দ উপভোগ করেছে। গৃহস্থালীর পণ্যের স্টলে ভিড় বেশি। যেন কেনাবেচার ধুম পড়েছে।
নিকুঞ্জ থেকে আসা বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও ব্যাংক কর্মকর্তা ঝুমা আক্তার বলেন, স্থায়ী প্যাভিলিয়নে প্রবেশ করতেই বঙ্গবন্ধু কর্ণার-বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন খুব ভালোই লেগেছে। বাংলার ইতিহাসের ন্যায় বঙ্গবন্ধুর জীবনী, তাঁর কর্মক্ষেত্রের উপর লেখা বইগুলো সত্যিই প্রশংসনীয়। স্টলের টেলিভিশনে প্রচারিত ৭ই মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ ছবি দর্শকদের আকৃষ্ট করছে।
জাপান প্রবাসী ঢাকা থেকে স্বপরিবারে আসা আবু বকর সিদ্দিক খোকন বলেন, মেলার আশপাশের ধুলাবালুতে নিয়মিত পানি ছিটানো প্রয়োজন। খাবার স্টল ফুড বাংলো ও মি.বাইটের উত্তর পাশে যেন ময়লার ভাগার। সেখান থেকে খাবার স্টলগুলোতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দ্রুত সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন।
ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মানসুরা জান্নাত মনিমা বলেন, মুল্য ছাড়ে তিনি মেলার ইমিটেশনের অলংকার, চোখ জুড়ানো বিদেশি কার্পেট, শাল, বিজ্ঞান মেলা থেকে শিক্ষা উপকরণ ক্রয় করেছেন।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে স্বপরিবারে আসা ব্যবসায়ী আনোয়ার ইকবাল বলেন, ঢাকা বাইপাস সড়কের যানজট এখনো নিরসন হয়নি। ভুলতা গাউছিয়া থেকে ৬/৭ কিলোমিটার দুরত্বের মেলাপ্রাঙ্গণে প্রাইভেটকারে করে আসতে তাঁর সময় লেগেছে দুই ঘণ্টা। মেলার আনন্দ যানজটেই শেষ। যানজট নিরসন করতে না পারলে ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। আর দর্শনার্থীরা আনন্দ উল্লাস থেকে বঞ্চিত হবেন।
মিনিষ্টার ইলেক্ট্রনিক্সের বিক্রয় প্রতিনিধি সোনিয়া আক্তার বলেন, মেলায় বিক্রি কম হলেও পণ্য প্রদর্শনে তারা সফল।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিয়া সুলতানা বলেন, দফায় দফায় তারা স্টলগুলো পরিদর্শন করছেন। অনিয়ম পেলেই জরিমানা আদায় করছেন। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন ও উৎপাদনের সহায়তার জন্য এ মেলার আয়োজন করা হয়। সেদিক থেকে এবারের বাণিজ্য মেলা সার্থক হয়েছে। ধুলাবালুতে প্রতিনিয়ন পানি দেওয়া হচ্ছে।